![]() |
স্বৈরাচার শেখ হাসিনা |
ভারত কেন শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছিল, তার পিছনে ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিভিন্ন কারণ রয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সে সময় শেখ হাসিনা এবং তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশে (জার্মানিতে) ছিলেন। তাঁদের দেশে ফেরার কোনো সুযোগ ছিল না, কারণ খুনিরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই থেমে থাকেনি, তারা বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সব সদস্যকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। ফলে শেখ হাসিনার জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত তাঁকে একটি নিরাপদ দেশে আশ্রয় নিতে হয়, আর ভারত সেই সাহায্য করে।
ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার পেছনের কারণসমূহ
১. মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সহায়তা
শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার নিরাপত্তা চরম ঝুঁকির মধ্যে ছিল। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর নতুন সামরিক সরকার ও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা চাইছিল যেন তাঁর পরিবারের কেউই রাজনীতিতে ফিরে না আসতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ভারত মানবিক কারণে শেখ হাসিনা ও তাঁর বোনকে আশ্রয় দেয় এবং তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে।
২. বাংলাদেশ ও ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্ক
ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরা গান্ধী পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ফলে শেখ হাসিনা রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার পর ভারত তাকে সহযোগিতা করতে দ্বিধা করেনি।
৩. রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কারণ
১৯৭৫ সালের পর বাংলাদেশে সামরিক শাসন শুরু হয় এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারত চেয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ রক্ষার জন্য প্রগতিশীল নেতৃত্ব টিকে থাকুক। শেখ হাসিনা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতীক, তাই ভারত তাঁকে আশ্রয় দেয়।
৪. নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রাখা
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড ছিল শুধু ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে নয়, এটি ছিল রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। হত্যাকাণ্ডের পরপরই সামরিক সরকার ক্ষমতায় আসে এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে। এই পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা যদি বাংলাদেশে ফিরতেন, তাহলে তাঁর জীবনও হুমকির মুখে পড়ত। তাই ভারত তাঁকে আশ্রয় দিয়ে সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
৫. ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব রক্ষা করা
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এবং আছে। ভারত চেয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী নেতৃত্বকে সমর্থন করতে। শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত শুধু মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সাহায্য করেনি, বরং ভবিষ্যতে বাংলাদেশে একটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসম্পন্ন সরকার গঠনের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রেখেছিল।
ভারতে শেখ হাসিনার জীবন
শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা ভারতে প্রায় ছয় বছর (১৯৭৫-১৯৮১) অবস্থান করেন। সে সময় তাঁরা দিল্লিতে ছিলেন এবং ভারতের সরকার তাঁদের থাকা-খাওয়ার সব ব্যবস্থা করেছিল। শেখ হাসিনা এ সময় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখতেন এবং বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতেন।
১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করে এবং তখন তিনি দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। ভারতের সহায়তায় ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং এরপর বাংলাদেশে তাঁর রাজনৈতিক জীবন নতুনভাবে শুরু হয়।
উপসংহার
ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছিল মূলত মানবিক কারণ, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক স্বার্থ এবং বাংলাদেশ-ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্কের কারণে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শেখ হাসিনার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল, তাই ভারত তাঁকে সুরক্ষা দেয়। পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
0 Comments