শেখ হাসিনার জীবন ইতিহাস


 

শেখ হাসিনার বিস্তারিত জীবন ইতিহাস


প্রথম অংশ: জন্ম ও শৈশব

শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠ কন্যা। তাঁদের পরিবারের শিকড় ছিল রাজনৈতিক ও সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে গভীরভাবে প্রোথিত। ছোটবেলা থেকেই তিনি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং তাঁর আদর্শের ছায়ায় বড় হন।


দ্বিতীয় অংশ: শিক্ষা জীবন

শেখ হাসিনার শিক্ষা জীবন শুরু হয় গোপালগঞ্জে। পরে তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং আজিমপুর গার্লস স্কুল থেকে মাধ্যমিক (এসএসসি) সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পাস করেন ঢাকা কলেজ থেকে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।


তৃতীয় অংশ: রাজনৈতিক জীবন ও সংগ্রাম

প্রথম রাজনৈতিক যাত্রা (১৯৭৫-এর পূর্বে)

শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও নির্বাসিত জীবন (১৯৭৫-১৯৮১)

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে একদল সেনা সদস্য নির্মমভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের প্রায় সবাইকে হত্যা করে। শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা সে সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। এরপর তিনি প্রায় ছয় বছর ভারতসহ বিভিন্ন দেশে নির্বাসিত জীবনযাপন করেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ (১৯৮১-১৯৯৬)

১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর তিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই চালিয়ে যান।


চতুর্থ অংশ: প্রধানমন্ত্রীত্ব ও উন্নয়ন

প্রথম মেয়াদ (১৯৯৬-২০০১)

১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। এই সময় উল্লেখযোগ্য কিছু অর্জন ছিল:
✅ পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর
✅ গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি
✅ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন
✅ বিদ্যুৎ খাতে উন্নয়ন

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে, এবং শেখ হাসিনা বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করেন।


দ্বিতীয় মেয়াদ (২০০৯-২০১৪)

২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল জয় পায়, এবং শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। এই সময়ে:
✅ ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন শুরু হয়
✅ বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়
✅ শিক্ষা খাতে যুগান্তকারী উন্নয়ন ঘটে


তৃতীয় মেয়াদ (২০১৪-২০১৮)

২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুনরায় সরকার গঠন করে। এই সময়:
✅ পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়
✅ দারিদ্র্যের হার কমে আসে
✅ তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার ঘটে


চতুর্থ মেয়াদ (২০১৮-বর্তমান)

২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবারও জয়ী হয় এবং শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। তাঁর সময়ে:
✅ পদ্মা সেতু উদ্বোধন
✅ মেট্রোরেল চালু
✅ কর্ণফুলী টানেল
✅ শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ


পঞ্চম অংশ: ব্যক্তি জীবন

১৯৬৮ সালে শেখ হাসিনা বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের এক পুত্র (সজীব ওয়াজেদ জয়) এবং এক কন্যা (সায়মা ওয়াজেদ) রয়েছে।


ষষ্ঠ অংশ: আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি

তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি পেয়েছেন, যেমন:
🏆 চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ
🏆 এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার
🏆 ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার


উপসংহার

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালনকারী প্রধানমন্ত্রী। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

আপনি কি আরও বিস্তারিত কোনো অংশ জানতে চান? 😊


শেখ হাসিনা কে কেন গনহত্যা কারী বলা হয়


"গণহত্যা" একটি গুরুতর অভিযোগ, এবং এটি সাধারণত যুদ্ধকালীন অপরাধ বা ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে সম্পর্কিত। শেখ হাসিনাকে কেন বা কী প্রসঙ্গে "গণহত্যাকারী" বলা হয়, তা মূলত রাজনৈতিক বিতর্ক এবং বিরোধীদের বক্তব্যের ওপর নির্ভর করে। কিছু রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী বিশেষ করে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর কারণে তাঁকে সমালোচনা করে থাকে:

১. ২০১৩-২০১৫ সালের রাজনৈতিক সহিংসতা

২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় ঘোষণার পর জামায়াত-শিবির ও বিএনপি জোট দেশজুড়ে সহিংসতা শুরু করে। এ সময় সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কারণে অনেক মানুষ নিহত হয়। সরকার বলেছিল, তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছে, কিন্তু বিরোধীরা এটিকে দমনপীড়ন হিসেবে অভিহিত করে।

২. ২০১৮ সালের ছাত্র আন্দোলন ও নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা

২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের কঠোর অবস্থান এবং কিছু রাজনৈতিক কর্মীর হামলার কারণে শেখ হাসিনার সরকার সমালোচিত হয়। তবে সরকার এটিকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বজায় রাখার অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছিল।

৩. র‍্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো (যেমন: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ) বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গুমের অভিযোগ এনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বিরোধীরা এই ঘটনাগুলোকে "গণহত্যা" বা "মানবাধিকার লঙ্ঘন" বলে বর্ণনা করে থাকে।

৪. রোহিঙ্গা ইস্যু

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। যদিও বাংলাদেশ সরকার বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে, তবে কিছু গোষ্ঠী দাবি করে যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।

সরকারের অবস্থান

বাংলাদেশ সরকার এবং আওয়ামী লীগ বলছে, এই অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারা দাবি করে যে, শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা কখনো কখনো বিরোধীরা ভুলভাবে উপস্থাপন করে।

উপসংহার

শেখ হাসিনাকে "গণহত্যাকারী" বলা রাজনৈতিক বিরোধীদের একটি অবস্থান। এটি একটি বিতর্কিত ও মতভেদপূর্ণ বিষয়, যা নির্ভর করে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। তবে আন্তর্জাতিকভাবে শেখ হাসিনার সরকারকে মানবাধিকার বিষয়ে সমালোচনা করা হলেও, তাকে সরাসরি "গণহত্যাকারী" হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়নি।

আপনার যদি কোনো নির্দিষ্ট প্রসঙ্গ বা ঘটনা নিয়ে জানতে চান, তাহলে বলতে পারেন। 😊

Post a Comment

0 Comments