তাবলীগ জামাত (তাবলিগ জামাত) হলো একটি অরাজনৈতিক ইসলামি দাওয়াতি আন্দোলন, যা ১৯২৬ সালে ভারতের মেওয়াত অঞ্চলে শুরু হয়। এই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভী (রহ.), যিনি ভারতের দেওবন্দি ইসলামি চিন্তাধারার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।🕌 তাবলীগ জামাতের বিস্তারিত ইতিহাস
১. প্রতিষ্ঠা ও প্রেক্ষাপট (ভারত, ১৯২৬)
-
প্রতিষ্ঠাতা: মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভী (রহ.), যিনি দেওবন্দ মাদ্রাসা ও নিজামুদ্দিন মারকাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
-
মুল উদ্দেশ্য: ইসলামের মৌলিক শিক্ষা ভুলে যাওয়া সাধারণ মুসলমানদের দ্বীনী চেতনা ফিরিয়ে আনা।
-
শুরু: ভারতের মেওয়াত অঞ্চলের মুসলিম সমাজে, যারা অনেকটাই ইসলামি শিক্ষা ও রীতিনীতির বাইরে চলে গিয়েছিল।
🌟 তাবলীগ জামাতের মূল দর্শন ও শিক্ষা
🔑 ছয়টি মূল কথা (ছয় উসুল):
১. কালিমা – ঈমান ও তাওহিদে মজবুতি। ২. নামাজ – নিয়মিত ও জামাতে নামাজ পড়া। ৩. ইলম ও জিকির – ইসলামি জ্ঞান অর্জন ও আল্লাহর স্মরণ। ৪. ইকরামুল মুসলিমীন – মুসলমানদের সম্মান করা। ৫. ইখলাস – শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ। ৬. নিয়ত ও সময় আল্লাহর পথে ব্যয় – খুরুজের মাধ্যমে দ্বীনের কাজে সময় দেওয়া।
🚶♂️ কাজের পদ্ধতি
📅 খুরুজ (তাবলীগ সফর)
-
৩ দিন, ১০ দিন, ৪০ দিন, বা ৪ মাস সময় বের করে অন্য জায়গায় গিয়ে ইসলামি দাওয়াত দেওয়া।
-
নিজামুদ্দিন মারকাজ (ভারত) এবং রায়বন্দ মারকাজ (পাকিস্তান) থেকে নিয়মতান্ত্রিক খুরুজ চলে।
📚 গাশত
-
প্রতিদিন/প্রতিসপ্তাহে স্থানীয়ভাবে মুসলমানদের দাওয়াত দিতে বের হওয়া।
🕌 মসজিদকেন্দ্রিক দাওয়াত
-
তাবলীগ জামাত সব কাজ মসজিদ ভিত্তিক করে – রাজনীতি বা মিডিয়াতে সম্পৃক্ত হয় না।
🌍 বিশ্বব্যাপী বিস্তার
-
প্রভাবিত অঞ্চল: ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা।
-
ইজতেমা: বার্ষিক বিশাল সম্মেলন, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো বাংলাদেশের টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা।
🇧🇩 বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাবলীগ জামাত
আগমন ও বিস্তার
-
তাবলীগ জামাত বাংলাদেশের মুসলমানদের মধ্যে ব্রিটিশ আমলেই প্রবেশ করে।
-
স্বাধীনতা পরবর্তীকালে এর প্রভাব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে।
গুরুত্বপূর্ণ মারকাজ
-
কাকরাইল মসজিদ, ঢাকা: বাংলাদেশের প্রধান মারকাজ।
-
এখান থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় খুরুজ, জোড় (ইজতেমার প্রস্তুতি), ও ইজতেমা পরিচালিত হয়।
বিশ্ব ইজতেমা
-
প্রতিবছর টঙ্গী, গাজীপুরে অনুষ্ঠিত হয়।
-
লক্ষাধিক মুসলমান অংশগ্রহণ করেন, অনেক দেশ থেকেও মানুষ আসে।
-
এটি হজের পর সবচেয়ে বড় মুসলিম জমায়েত বলে বিবেচিত।
⚠️ সাম্প্রতিক বিভক্তি ও মতভেদ
২০১৫ সালের পর থেকে তাবলীগ জামাতে অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ দেখা দেয়। মূলত দুইটি ধারায় বিভক্ত হয়:
-
মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারী (নিজামুদ্দিন মারকাজ)
-
শুরা অনুসারী (পাকিস্তানের রাইয়েন্ড ও বাংলাদেশের শুরা অনুসরণকারী)
বাংলাদেশের অবস্থান:
-
শুরা পন্থীরা কাকরাইল মারকাজ পরিচালনা করেন।
-
মাওলানা সাদের অনুসারীরা প্রাথমিকভাবে নিষ্ক্রিয় থাকলেও পরবর্তীতে আলাদা সম্মেলনের আয়োজন করতে থাকেন।
📌 সারসংক্ষেপ
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
প্রতিষ্ঠা | ১৯২৬, মেওয়াত, ভারত |
প্রতিষ্ঠাতা | মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভী (রহ.) |
উদ্দেশ্য | সাধারণ মুসলমানদের দ্বীনের দিকে ফিরিয়ে আনা |
পদ্ধতি | খুরুজ, গাশত, ছয় উসুল |
প্রধান কেন্দ্র | নিজামুদ্দিন মারকাজ (ভারত), কাকরাইল মারকাজ (বাংলাদেশ) |
বিশ্ব ইজতেমা | টঙ্গী, গাজীপুর |
মতভেদ | সাদ পন্থী বনাম শুরা পন্থী বিভক্তি |
আপনি চাইলে আমি তাবলীগ জামাতের বিভিন্ন কাজের দাওয়াতি কৌশল, ব্যক্তিত্বদের সংক্ষিপ্ত জীবনী বা বাংলাদেশের কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কেও বিশদ বলতে পারি। কোনটা জানতে আগ্রহী?
0 Comments