বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাস একটি জটিল ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি মূলত উপমহাদেশে ইসলামী রাজনীতির ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে গড়ে উঠেছে। নিচে সংক্ষেপে দলটির ইতিহাস তুলে ধরা হলো:
📜 প্রতিষ্ঠা ও প্রারম্ভিক ইতিহাস
-
১৯৪১ সাল: উপমহাদেশে মাওলানা আবুল আলা মওদূদী “জামাতে ইসলামী” প্রতিষ্ঠা করেন ব্রিটিশ ভারতের লাহোরে। মূল লক্ষ্য ছিল ইসলামী আদর্শে সমাজ গঠন এবং শরিয়া প্রতিষ্ঠা।
-
শুরুতে এটি ছিল ধর্মীয় ও আদর্শভিত্তিক আন্দোলন, পরে রাজনৈতিক রূপ নেয়।
🇵🇰 পাকিস্তান আমলে জামায়াত
-
১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর জামায়াতে ইসলামী পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) ও পশ্চিম পাকিস্তানে পৃথকভাবে কাজ শুরু করে।
-
পূর্ব পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে ছিলেন গোলাম আযম, অধ্যাপক সৈয়দ আবুল আলা মওদূদীর চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত।
-
দলটি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ইসলামী শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং শরিয়াভিত্তিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে।
⚔️ মুক্তিযুদ্ধ ও বিতর্ক
-
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী এবং এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ (বর্তমানে ইসলামী ছাত্রশিবির) পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেয়।
-
মুক্তিযুদ্ধের সময় দলটির কিছু নেতাকর্মী “আল-বদর”, “আল-শামস” এর মতো সহায়ক বাহিনীর মাধ্যমে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করে।
-
স্বাধীনতার পরে এই কারণে দলটির ওপর ব্যাপক সমালোচনা হয়।
🛑 স্বাধীনতা-পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা ও পুনর্গঠন
-
১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জামায়াতে ইসলামীসহ সব ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
-
১৯৭৯ সালে, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে দলটির রাজনীতি করার অনুমতি দেন। এরপর জামায়াত আবার সক্রিয় হয়।
🏛️ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পর্ব
-
১৯৯০-এর দশকে বিএনপির সঙ্গে জোট করে জামায়াত সরকারে অংশ নেয় (২০০১–২০০৬ সালে ৪ দলীয় জোট সরকারের অংশ ছিল)।
-
দলটির জনপ্রিয়তা মূলত কট্টর ইসলামপন্থি ও রক্ষণশীল জনগোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
-
২০১০ সাল থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেয়া হলে, জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
-
গোলাম আযম, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, কাদের মোল্লা, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ অনেক নেতা ফাঁসি ও বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত হন।
-
এতে দলের ভাবমূর্তি এবং সাংগঠনিক শক্তি অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে।
🚫 নিষিদ্ধ ও সাম্প্রতিক পরিস্থিতি
-
২০১৩ সালে, আদালত জামায়াতকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল করে। ফলে দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না।
-
বর্তমানে দলটি আংশিকভাবে সক্রিয়, তবে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়ন্ত্রণ ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
-
ছাত্র সংগঠন “ইসলামী ছাত্রশিবির” এখনও কার্যকর, তবে রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর নজরদারিতে রয়েছে।
🔍 সামাজিক ও আদর্শিক প্রভাব
-
জামায়াতে ইসলামীর কিছু সামাজিক প্রতিষ্ঠান (যেমন: হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেললেও দলটির রাজনৈতিক অবস্থান ও ইতিহাস বিতর্কিত।


0 Comments