রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সিরিয়া সফর দুটি তাঁর নবুয়তের আগের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল। উভয় সফরই ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে হলেও এতে কিছু ব্যতিক্রমী বিষয় ঘটেছিল, যা পরবর্তীতে ইসলামের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠে।
✨ প্রথম সিরিয়া সফর (১২ বছর বয়সে)
🔹 সফরের কারণ:
রাসুল ﷺ যখন প্রায় ১২ বছর বয়সে (৫৮২ খ্রিস্টাব্দের দিকে) ছিলেন, তখন তাঁর চাচা আবু তালিব ব্যবসায়িক কাফেলার সাথে সিরিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। রাসুল ﷺ চাচার স্নেহের কারণে তাঁর সাথে যেতে আগ্রহী হন। আবু তালিব প্রথমে নিতে চাননি, কিন্তু রাসুল ﷺ-এর আকুল অনুরোধে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে যান।
🔹 সফরের ঘটনা:
- কাফেলা সিরিয়ার পথে বুসরা (Busra) নামক স্থানে পৌঁছালে সেখানে বাহিরা (বা বুহাইরা) নামক একজন খ্রিস্টান পাদ্রি ছিলেন।
- বাহিরা কাফেলার আগমনের আগেই বুঝতে পারেন, তাদের মাঝে একজন বিশেষ ব্যক্তি রয়েছেন।
- তিনি কাফেলার সবাইকে খাবারের দাওয়াত দেন এবং ছোট্ট মুহাম্মদ ﷺ-কে লক্ষ্য করেন।
- বাহিরা রাসুল ﷺ-কে দেখে বলেন, "এই শিশু বড় হয়ে নবী হবেন।"
- তিনি রাসুল ﷺ-এর শরীরে নবুয়তের চিহ্ন (মোহর) দেখেন এবং বিভিন্ন প্রশ্ন করে নিশ্চিত হন যে তিনি শেষ নবী হবেন।
- এরপর বাহিরা আবু তালিবকে পরামর্শ দেন, যেন তিনি মুহাম্মদ ﷺ-কে সিরিয়ায় না নিয়ে যান এবং শত্রুদের থেকে সাবধান থাকেন।
- এরপর আবু তালিব রাসুল ﷺ-কে নিয়ে দ্রুত মক্কায় ফিরে আসেন।
✨ দ্বিতীয় সিরিয়া সফর (২৫ বছর বয়সে)
🔹 সফরের কারণ:
রাসুল ﷺ যখন প্রায় ২৫ বছর বয়সী (৫৯৫ খ্রিস্টাব্দের দিকে), তখন মক্কার এক সম্মানিত ও ধনী নারী খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ (রা.) তাঁর ব্যবসার জন্য একজন সৎ ও দক্ষ প্রতিনিধি খুঁজছিলেন।
- তিনি রাসুল ﷺ-এর সততা ও ন্যায়পরায়ণতার খ্যাতি শুনে তাঁকে তাঁর ব্যবসার পরিচালকের দায়িত্ব দেন।
- রাসুল ﷺ খাদিজা (রা.)-এর দাস মাইসারাকে সাথে নিয়ে সিরিয়া সফর করেন।
🔹 সফরের ঘটনা:
- রাসুল ﷺ সিরিয়া গিয়ে খাদিজা (রা.)-এর মালামাল বিক্রি করেন এবং অত্যন্ত লাভজনক লেনদেন করেন।
- ব্যবসায়িক চুক্তির প্রতি তাঁর সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও বিচক্ষণতা দেখে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ মুগ্ধ হন।
- তাঁর সততার কারণে খাদিজা (রা.) লাভের পরিমাণ পূর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ পান।
- সফরের সময় নেস্তুরা নামে এক খ্রিস্টান পাদ্রি রাসুল ﷺ-কে দেখে তাঁর নবুয়তের লক্ষণগুলো শনাক্ত করেন এবং মাইসারাকে জানান।
- মাইসারা রাসুল ﷺ-এর ব্যতিক্রমী গুণাবলির কথা খাদিজা (রা.)-কে জানান।
- এরপর খাদিজা (রা.) রাসুল ﷺ-এর প্রতি আকৃষ্ট হন এবং পরে তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন।
✨ উভয় সফরের গুরুত্ব:
✅ প্রথম সফর রাসুল ﷺ-এর নবুয়তপ্রাপ্তির পূর্বাভাস দেয়।
✅ দ্বিতীয় সফর তাঁর সততা ও ব্যবসায়িক দক্ষতা প্রমাণ করে, যা খাদিজা (রা.)-এর সাথে তাঁর বিয়ের পথ সুগম করে।
✅ উভয় সফরই রাসুল ﷺ-এর ভবিষ্যৎ জীবনে প্রভাব বিস্তার করে এবং নবুয়তের প্রস্তুতি হিসেবে কাজ করে।
এই দুই সফর ছিল রাসুল ﷺ-এর জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা, যা ইসলামের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ❤️

0 Comments