আওয়ামীলীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডে আর্থিক সহায়তা করেছিল সালমান এফ রহমান, দাবি তার ছেলে রেজা কিবরিয়ার

 

রেজা কিবরিয়াফাইল ছবি

সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের ২০ বছর হয়েছে আজ সোমবার ২৭ শে জানুয়ারি। এ উপলক্ষে তাঁর ছেলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গণ অধিকার পরিষদের সদ্য বিধায়ী সাবেক সভাপতি রেজা কিবরিয়া এক ভিডিও বার্তায় তার বাবার হত্যা মামলার বিচার নিয়ে অনেক অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

আজ সোমবার রেজা কিবরিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কে এই ভিডিও বার্তা পাঠান। রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘একটি সুষ্ঠু বিচারের জন্য ২০ বছর ধরে আমরা অপেক্ষা করছি। কিন্তু সুষ্ঠু তদন্ত এখনো হয়নি আওয়ামী লীগের সময়। এর বিচার হয়নি। এ ঘটনায় সাবেক অর্থমন্ত্রীর দল আওয়ামী লীগের তিন ও বিএনপির এক নেতা সরাসরি জড়িত ছিলেন।

সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা শাহ এ এম এস কিবরিয়া


২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি সিলেটের হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগের দলীয় এক জনসভায় গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী  শাহ এ এম এস কিবরিয়া। চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। ওই হামলায় তাঁর ভাতিজা আওয়ামীলীগ নেতা শাহ মঞ্জুরুল হুদা, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা আবদুর রহিম, আবুল হোসেন এবং সিদ্দিক আলী নিহত হন। আহত হন প্রায় ৭০ জন। আলোচিত সমালোচিত এ মামলায় বর্তমানে সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।

গ্রেনেড হামলা করার পরদিন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সেই সময়কার তৎকালিন সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মজিদ খান সাহেব বাদী হয়ে হত্যা মামলা ও সিলেট পুলিশ বাদী হয়ে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আরও একটি মামলা দায়ের করেন। পরে মামলা দুটি অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। তদন্ত শেষে ২০০৫ সালে ১৮ ই মার্চ শহীদ জিয়া স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদের তৎকালিন কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল কাইউমসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রথম অভিযোগপত্র দায়ের করেন সিআইডি। এই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে কাছে নারাজি আবেদন করে বাদীপক্ষ। পরে ২০০৭ সালে মামলাটি আবার পুনরায় তদন্তের জন্য আবার সিআইডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।পরে দ্বিতীয় দফায় ২০১১ সালের ২০শে জুন আসামির সংখ্যা আরও ১৬ জন বাড়িয়ে মোট ২৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়ের করা হয়। এ নিয়েও আপত্তি জানান নিহত নেতার পরিবারের পক্ষ থেকে।

https://islamicqa-bd.blogspot.com/2025/01/blog-post_82.html


সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৩ই নভেম্বর মামলার পঞ্চম তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট অঞ্চলের তৎকালীন (এএসপি) সহকারী পুলিশ সুপার  মেহেরুন্নেসা পারুল হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে একটি সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন।। এতে নতুন করে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপির নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব প্রয়াত মরহুম হারিছ চৌধুরী, সিলেটের সাবেক জনপ্রিয় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র এবং হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া ওরফে জি কে গউছ, মওলানা মোহাম্মদ তাজউদ্দিনের ভগ্নিপতি হাফেজ মোহাম্মদ ইয়াহিয়া আবু বকর, দেলোয়ার হোসেন,মোহাম্মদ শেখ ফরিদ, আবদুল জলিল, মাওলানা মোহাম্মদ শেখ আবদুস সালামসহ মোট ৩৫ জনকে আসামি করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে বোমা হামলা করা ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়। এই ৩৫ জনের মধ্যে দুজন মামলা চলাকালিন সময় প্রাণ হারিয়েছেন।



ভিডিও বার্তায় এস এম রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘এ মামলায় জড়িতরা হলেন, হবিগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আবু জাহির, আবদুল মজিদ খান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুশফিক হোসেন চৌধুরী। আরও জড়িত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া ওরফে জি কে গউছ। তাঁদের এ কর্মকাণ্ডে এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে তিনি সর্ব প্রকার সহযোগিতা করেন আওয়ামী লীগ নেতা সালমান এফ রহমান নিজে আর্থিক সহায়তা করেন। সালমান এফ রহমান নানা কারণে আমার বাবা আওয়ামীলীগ নেতা শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। আওয়ামী লীগের শাসন কালে দুর্নীতি, বিশেষ করে ব্যাংক ও শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সরাসরি বিরুদ্ধে ছিলেন আমার বাবা। এর জন্য সালমান এফ রহমানরা আমার বাবার উপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। তাঁরা প্রত্যেকেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের প্রিয় ও কাছের মানুষ ছিলেন। যে কারণে এ হত্যাকাণ্ডের এখনও কোন সুষ্ঠু তদন্ত করা হয়নি। একটি অসমাপ্ত তদন্তের ভিত্তির উপর তো সুষ্ঠু বিচারকাজ হতে পারে না।’

এস এম রেজা কিবরিয়া এখনো হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের আশা করেন বলে জানিয়ে ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমাদের মতো বাংলাদেশের আরো হাজারো পরিবার আছে তাঁরা তাঁদের প্রিয়জনদের কে হারিয়েছে। তাঁরাও এখনও বিচার পায়নি। আমরা সেই বিচারের অপেক্ষায় রইলাম।’

Post a Comment

0 Comments