ভারতের ক্ষমতাসীন দল কেন এতো ঘৃনার পাত্র

                                     

ভারতের ক্ষমতাসীন দল কেন এতো ঘৃনার পাত্র

আমি নিচে প্রধান প্রধান বিষয়ের প্রতিটিকে আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করছি, যাতে তুমি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারো কেন ভারতের ক্ষমতাসীন দল (বিজেপি) অনেক মানুষের কাছে ঘৃণার পাত্র হয়ে উঠেছে।


🟠 ১. ধর্মীয় মেরুকরণ ও হিন্দুত্ববাদের রাজনীতি

🔸 হিন্দুত্ব বনাম হিন্দুধর্ম:

  • বিজেপি ও তার আদর্শিক সংগঠন আরএসএস (RSS) "হিন্দুত্ব" নামক একটি রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করে, যা হিন্দুধর্মকে শুধুমাত্র ধর্ম হিসেবে নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক পরিচয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

  • সমালোচকরা বলেন, এটি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোকে আঘাত করে এবং সংখ্যালঘুদের, বিশেষত মুসলিমদের, দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করে।

🔸 কিছু উদাহরণ:

  • মোব লিঞ্চিং: মুসলিমদের গরু মাংস খাওয়ার অভিযোগে হেনস্তা ও হত্যা।

  • CAA এবং NRC: এই আইন ও প্রকল্প মুসলিমদের নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করেছে। এই কারণে ব্যাপক আন্দোলন হয়, যেমন দিল্লির শাহিনবাগ আন্দোলন।

  • "লাভ জিহাদ" আইন: মুসলিম পুরুষদের বিরুদ্ধে হিন্দু নারীদের ধর্মান্তর করার অভিযোগ এনে কিছু রাজ্যে আইন তৈরি হয়েছে।



🟠 ২. গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতা

🔸 মিডিয়ার স্বাধীনতা:

  • বিজেপি সরকারের সময়ে "গোদি মিডিয়া" (সরকার ঘেঁষা মিডিয়া) শব্দটি জনপ্রিয় হয়।

  • মূলধারার অনেক চ্যানেল বিজেপির প্রশংসা করে, অথচ বিরোধীদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালায়।

🔸 বিচারব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন:

  • বিচারপতিদের হঠাৎ বদলি, কিছু মামলার বিচারাধীন অবস্থায় দেরি, বা গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি পিছিয়ে যাওয়া—এসব নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়।

  • নির্বাচন কমিশন অনেক সময় বিজেপি-বান্ধব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।


🟠 ৩. মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ

🔸 দমননীতি:

  • সাংবাদিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, ছাত্রনেতা—যারা সরকারের সমালোচনা করেন, তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা, ইউএপিএ, সাইবার অপরাধ আইন ব্যবহার করা হয়।

  • উদাহরণ: দাভোলকর, কালবুর্গি, গৌরী লঙ্কেশ – এসব সাংবাদিক ও সমাজ সংস্কারককে খুন করা হয়েছে।

🔸 ডিজিটাল সেন্সরশিপ:

  • সোশ্যাল মিডিয়াতে সরকারের সমালোচনামূলক পোস্ট মুছে ফেলা হয়, অনেক সময় অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হয়।



🟠 ৪. অর্থনৈতিক বৈষম্য ও বেকারত্ব

🔸 শিল্পপতিদের প্রতি পক্ষপাত:

  • বিজেপি সরকার আম্বানি, আদানির মতো কর্পোরেট হাউসের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রেখেছে বলে অভিযোগ।

  • বহু বড় বড় সরকারি প্রকল্প তাদের দেওয়া হয়েছে—যেমন: বিমানবন্দর, খনি, রেলপথ।

🔸 কৃষক আন্দোলন:

  • ২০২০-২১ সালে তিনটি কৃষি আইনকে কেন্দ্র করে বিশাল কৃষক আন্দোলন হয়।

  • সরকার প্রথমে অনড় ছিল, পরে আন্দোলনের চাপে আইন প্রত্যাহার করে।

🔸 বেকারত্ব:

  • সরকার বলেছে তারা কোটি কোটি চাকরি সৃষ্টি করবে, কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে বিপুল সংখ্যক তরুণ বেকার রয়ে গেছে।


🟠 ৫. সংস্কৃতি ও ভাষা নিয়ে আধিপত্য বিস্তার

🔸 হিন্দি ভাষার আধিপত্য:

  • বিজেপি সরকার হিন্দিকে জাতীয় ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যদিও ভারত বহুভাষিক দেশ।

  • দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলো, বিশেষত তামিলনাড়ু, এই প্রচেষ্টাকে সাংবিধানিক বৈচিত্র্যের প্রতি অবজ্ঞা হিসেবে দেখে।

🔸 ইতিহাস ও পাঠ্যবই পরিবর্তন:

  • মুসলিম শাসকদের ভূমিকা খাটো করে দেখানো, আর্যদের গৌরব তুলে ধরা ইত্যাদি ইতিহাস বদলানোর প্রচেষ্টা সমালোচিত।



🔚 উপসংহার:

বিজেপিকে ঘৃণা করার পেছনে মূলত তিনটি স্তরের কারণ থাকে:

  1. নীতি (policy) – অনেক নীতিকে বৈষম্যমূলক ও একপাক্ষিক মনে করা হয়।

  2. ভাষ্য (narrative) – "আমরা বনাম ওরা" ধাঁচের রাজনীতি।

  3. কার্যপদ্ধতি (approach) – দমননীতি, মতদমন, এবং স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর হস্তক্ষেপ।

তবে একই সঙ্গে এটাও ঠিক, অনেকেই এই দলটিকে পছন্দ করে "শক্তিশালী নেতৃত্ব", "জাতীয় নিরাপত্তা", ও "ঐতিহ্যের পুনরুত্থান" এর জন্য।


Post a Comment

0 Comments