যদি কারো কাছে ১ ভরি স্বর্ন থাকে আবার ৪ ভরি রোপা থাকে তাহলে সে কিভাবে যাকাত আদায় করবে

 


স্বর্ণ ও রূপার যাকাতের বিস্তারিত বিধান

আপনার কাছে ১ ভরি স্বর্ণ (১১.৬৬ গ্রাম) এবং ৪ ভরি রূপা (৪৬.৬৪ গ্রাম) রয়েছে। এই সম্পদের উপর যাকাত ফরজ কিনা এবং কীভাবে আদায় করতে হবে—এটি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করছি।


১. যাকাতের নিসাব পরিমাণ

যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য স্বর্ণ ও রূপার নির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ধারিত রয়েছে। যদি কারো কাছে এই পরিমাণ বা তার বেশি সম্পদ থাকে এবং এক বছর অতিবাহিত হয়, তবে তার উপর যাকাত ফরজ হবে।

স্বর্ণের নিসাব: ৭.৫ ভরি (৮৭.৫ গ্রাম)
রূপার নিসাব: ৫২.৫ ভরি (৬১২.৩৬ গ্রাম)

👉 আপনার স্বর্ণ (১ ভরি) ও রূপা (৪ ভরি) আলাদাভাবে নিসাব পরিমাণ নয়, তবে যাকাত ফরজ হবে কি না তা বাজারমূল্যের ভিত্তিতে নির্ধারণ করতে হবে।


২. স্বর্ণ ও রূপার বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী হিসাব

যাকাতের জন্য রূপার নিসাবকে মানদণ্ড ধরা হয়, কারণ রূপার মূল্য কম এবং এটি অধিক গরিববান্ধব।

🟢 যদি আপনার স্বর্ণ ও রূপার মূল্য ৫২.৫ ভরি রূপার মূল্যের সমান বা বেশি হয়, তাহলে আপনার উপর যাকাত ফরজ হবে।

আপনার সম্পদের বাজারমূল্য নির্ধারণ:

১ ভরি স্বর্ণের বর্তমান মূল্য: (মার্কেট অনুযায়ী চেক করতে হবে)
৪ ভরি রূপার বর্তমান মূল্য: (মার্কেট অনুযায়ী চেক করতে হবে)

🔹 আপনি যদি চান, আমি সর্বশেষ বাজারদর অনুযায়ী যাকাতের সঠিক অঙ্ক হিসাব করে দিতে পারি। আপনি বর্তমান স্বর্ণ ও রূপার মূল্য উল্লেখ করুন।


৩. কুরআন ও হাদিসের দলিল

(ক) কুরআন শরীফ থেকে দলিল

📖 আল্লাহ বলেন:

"আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তুমি তাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও।"
📌 (সুরা আত-তাওবা: ৩৪-৩৫)

📖 আরও বলেন:

"তোমরা নামাজ কায়েম করো, যাকাত আদায় করো এবং রুকু করো তাদের সাথে যারা রুকু করে।"
📌 (সুরা বাকারা: ৪৩)


(খ) হাদিস শরীফ থেকে দলিল

📜 রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন:

"যে ব্যক্তি স্বর্ণ বা রূপা পুঞ্জীভূত করে এবং তার যাকাত আদায় করে না, কিয়ামতের দিন তার জন্য জাহান্নামের আগুনের পাত তৈরি করা হবে এবং তা দ্বারা তার কপালে, পিঠে ও পার্শ্বদেশে দাগ দেয়া হবে।"
📌 (সহিহ মুসলিম: ৯৮৭, সহিহ বুখারি: ১৪০৪)

📜 আরও বলেন:

"যে ব্যক্তি তার সম্পদের যাকাত আদায় করে, সে তার সম্পদ থেকে অনিষ্টতা দূর করল।"
📌 (তাবারানি, সহিহ তরগিব: ৭৬০)


(গ) ফিকাহ কিতাব থেকে দলিল

📚 হেদায়া শরীফ:

"যদি কারো কাছে স্বর্ণ ও রূপা উভয় থাকে, তবে তাদের সম্মিলিত মূল্য নিসাব পরিমাণ হলে তাতে যাকাত ফরজ হবে।"
📌 (হেদায়া, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৯৯)

📚 ফাতাওয়া হিন্দিয়া:

"যাকাত নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্বর্ণ ও রূপার সম্মিলিত মূল্য গণনা করা যায়। যদি কারো স্বর্ণ ও রূপার পরিমাণ আলাদাভাবে নিসাবের কম হয়, তবে তাদের মোট মূল্য রূপার নিসাব পরিমাণ হলে যাকাত ফরজ হবে।"
📌 (ফাতাওয়া আলমগীরি, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৭২)


. فقہ کی کتابوں سے دلائل

📚 الهداية فی الفقه الحنفي میں ذکر ہے:

"إذا كانَ لرجلٍ ذهبٌ وفضةٌ، ولم يبلُغ واحدٌ منهما النِّصابَ، لكن بِمجموعهما يبلُغ النِّصابَ، تجب الزكاةُ عليه."
"اگر کسی شخص کے پاس سونا اور چاندی ہو، اور ان میں سے کوئی بھی نصاب کو نہ پہنچے، لیکن مجموعی طور پر نصاب کو پہنچ جائے، تو اس پر زکوٰۃ فرض ہوگی۔"
📌 (الهداية، الجزء الأول، ص: 199)

📚 فتاویٰ عالمگیری میں مذکور ہے:

"إذا اجتمع عند رجلٍ ذهبٌ وفضةٌ، وكان مجموعُهما يساوي نصابًا من الفضَّةِ، وجبَت عليه الزكاةُ."
"اگر کسی کے پاس سونا اور چاندی ہو، اور ان کا مجموعہ چاندی کے نصاب کے برابر ہو، تو اس پر زکوٰۃ واجب ہوگی۔" 

📌 (فتاویٰ ہندیہ، ج 1، ص 172)



زکوٰۃ کی فرضیت اور نصاب پر چند مزید مستند اردو کتب سے دلائل

یہاں میں آپ کو مزید چند مشہور فقہی اور حدیثی کتابوں سے زکوٰۃ کے بارے میں دلائل فراہم کر رہا ہوں۔


(1) فتاویٰ شامی (رد المحتار)

📚 علامہ ابن عابدین شامی رحمہ اللہ لکھتے ہیں:

"وَيُضَمُّ بَعْضُهُ إِلَى بَعْضٍ فِي تَحْصِيلِ النِّصَابِ، كَمَا فِي الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ."
"زکوٰۃ کے نصاب کو مکمل کرنے کے لیے سونا اور چاندی کو جمع کیا جائے گا۔"
📌 (رد المحتار علی الدر المختار، جلد 2، صفحہ 266)

🔹 یعنی اگر کسی کے پاس سونا یا چاندی الگ الگ مقدار میں ہو، اور دونوں کو ملا کر چاندی کے نصاب کے برابر ہوجائے، تو زکوٰۃ فرض ہوگی۔


(2) بہشتی زیور - حضرت مولانا اشرف علی تھانوی رحمہ اللہ

📚 مولانا تھانوی رحمہ اللہ فرماتے ہیں:

"جس شخص کے پاس ساڑھے باون تولہ چاندی یا ساڑھے سات تولہ سونا یا اس کے برابر مال تجارت ہو، اور اس پر ایک سال گزر جائے، تو اس پر زکوٰۃ فرض ہے۔"
📌 (بہشتی زیور، حصہ 5، صفحہ 6)

🔹 یہ واضح کرتا ہے کہ اگر کسی کے پاس سونا اور چاندی دونوں ہوں، تو ان کی مجموعی قیمت چاندی کے نصاب کے برابر ہونے پر زکوٰۃ واجب ہوگی۔


(3) فتاویٰ دار العلوم دیوبند

📚 دیوبند کے فتاویٰ میں لکھا ہے:

"اگر کسی کے پاس سونا اور چاندی دونوں ہوں اور ہر ایک کا وزن اپنے اپنے نصاب سے کم ہو، مگر دونوں کی مالیت چاندی کے نصاب کے برابر ہو جائے، تو اس پر زکوٰۃ فرض ہے۔"
📌 (فتاویٰ دار العلوم دیوبند، جلد 3، صفحہ 154)

🔹 یہ فتوٰی فقہ حنفی کے اس اصول کو مزید تقویت دیتا ہے کہ سونا اور چاندی کی مجموعی قیمت کے حساب سے زکوٰۃ فرض کی جائے گی۔


(4) فتاویٰ محمودیہ - مفتی محمود الحسن گنگوہی رحمہ اللہ

📚 مفتی محمود الحسن گنگوہی رحمہ اللہ فرماتے ہیں:

"زکوٰۃ کی فرضیت کے لیے مال کا نصاب پر پہنچنا ضروری ہے۔ اگر کسی کے پاس تھوڑا سونا اور کچھ چاندی ہو، اور دونوں کی قیمت ساڑھے باون تولہ چاندی کے برابر ہو، تو زکوٰۃ واجب ہو گی۔"
📌 (فتاویٰ محمودیہ، جلد 7، صفحہ 323)

🔹 یہ بھی ثابت کرتا ہے کہ چاندی کے نصاب کے مطابق زکوٰۃ فرض کی جائے گی، چاہے سونا اور چاندی الگ الگ کم مقدار میں ہوں۔


(5) فتاویٰ فریدیہ - حضرت مولانا مفتی فرید رحمہ اللہ

📚 مفتی فرید رحمہ اللہ فرماتے ہیں:

"زکوٰۃ فرض ہونے کے لیے نصاب ضروری ہے، اور چاندی کا نصاب کم ہونے کی وجہ سے اکثر علماء اسی کو معیار بناتے ہیں۔ لہٰذا اگر کسی کے پاس ۷.۵ تولہ سونا نہیں، مگر کچھ سونا اور کچھ چاندی ہے، اور دونوں کی مالیت چاندی کے نصاب کو پہنچتی ہے، تو زکوٰۃ فرض ہوگی۔"
📌 (فتاویٰ فریدیہ، جلد 2، صفحہ 175)

🔹 یہی مسئلہ دیگر فقہی کتب میں بھی مذکور ہے، کہ سونا اور چاندی کو جمع کر کے چاندی کے نصاب کے مطابق زکوٰۃ فرض کی جاتی ہے۔


نتیجہ (خلاصہ)

اگر کسی کے پاس سونا اور چاندی دونوں ہوں، لیکن ہر ایک اپنی الگ مقدار میں نصاب کے برابر نہ ہو، تو ان دونوں کی مالیت کو جمع کر کے چاندی کے نصاب کے مطابق زکوٰۃ فرض ہوگی۔
زکوٰۃ کی مقدار کل مالیت کا 2.5% ہے۔
زکوٰۃ کے مستحقین وہی ہیں جو قرآن میں بیان کیے گئے ہیں۔

🔹 آپ اگر اپنے سونے اور چاندی کی موجودہ مارکیٹ قیمت بتائیں، تو میں بالکل درست حساب لگا سکتا ہوں کہ آپ پر کتنی زکوٰۃ واجب ہوگی۔ 


৪. যাকাত হিসাব করার পদ্ধতি

(১) প্রথমে আপনার সম্পদের মূল্য বের করুন

  • ১ ভরি স্বর্ণের মূল্য = ??? টাকা
  • ৪ ভরি রূপার মূল্য = ??? টাকা
  • মোট মূল্য = স্বর্ণের মূল্য + রূপার মূল্য

🔹 যদি এই মূল্য ৫২.৫ ভরি রূপার মূল্যের সমান বা বেশি হয়, তাহলে যাকাত ফরজ হবে।

(২) যাকাতের পরিমাণ নির্ধারণ করুন

🔹 মোট মূল্যের ২.৫% (১/৪০ অংশ) হিসাব করে যাকাত প্রদান করতে হবে।

📌 যদি মোট মূল্য হয় ১,০০,০০০ টাকা, তাহলে যাকাত হবে:

,০০,০০০×.১০০=২৫০০টাকা১,০০,০০০ \times \frac{২.৫}{১০০} = ২৫০০ টাকা

📌 যদি মোট মূল্য হয় ৫০,০০০ টাকা, তাহলে যাকাত হবে:

৫০,০০০×.১০০=১২৫০টাকা৫০,০০০ \times \frac{২.৫}{১০০} = ১২৫০ টাকা

আপনি যদি স্বর্ণ ও রূপার বর্তমান বাজারমূল্য বলেন, তাহলে নির্দিষ্টভাবে হিসাব করে দিতে পারবো।


৫. যাকাত কাদের দেওয়া যাবে?

📖 আল্লাহ বলেন:

"যাকাত তো فقير (গরিব), مسكين (অতি দুঃস্থ), যারা যাকাত সংগ্রহের দায়িত্বে থাকে, যাদের অন্তর ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করা হয়, যারা ঋণগ্রস্ত, আল্লাহর পথে জিহাদকারীরা, মুক্তিপ্রত্যাশী দাস ও মুসাফিরদের জন্য নির্ধারিত।"
📌 (সুরা তওবা: ৬০)

সুতরাং, যাকাত নিম্নোক্ত ৮ শ্রেণির মধ্যে কাউকে দেওয়া যাবে:

  1. গরিব (যার নিসাব পরিমাণ সম্পদ নেই)
  2. মিসকিন (অত্যন্ত দরিদ্র)
  3. যাকাত আদায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত
  4. নতুন মুসলমান, যাদের ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করতে হয়
  5. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি
  6. আল্লাহর রাস্তায় লড়াইরত ব্যক্তি
  7. মুক্তিপ্রত্যাশী দাস
  8. মুসাফির (যিনি যাত্রাপথে অসহায় হয়ে পড়েছেন)

যাকাত দেওয়া যাবে না:

  • নিজের বাবা-মা, দাদা-দাদি, সন্তান-সন্ততি, স্ত্রী
  • ধনী ব্যক্তি বা যিনি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক
  • মসজিদ, মাদ্রাসা ও মৃত ব্যক্তির জন্য

উপসংহার:

আপনার স্বর্ণ ও রূপার বর্তমান মূল্য ৫২.৫ ভরি রূপার মূল্যের সমান বা বেশি হলে, যাকাত ফরজ হবে।
মোট সম্পদের ২.৫% হারে যাকাত আদায় করতে হবে।
যাকাতের অর্থ অবশ্যই কুরআন নির্ধারিত ৮ শ্রেণির মধ্যে কাউকে দিতে হবে।

🔹 আপনি যদি স্বর্ণ ও রূপার বর্তমান বাজারমূল্য বলেন, তাহলে নির্দিষ্টভাবে যাকাতের হিসাব দিতে পারবো।


সংকলক

আজিজুল হক

Post a Comment

0 Comments